ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

দু’দফা বন্যায় জেলায় আমন চাষে চারা সংকট

কক্সবাজার প্রতিনিধি :::
মৌসুমের শুরুতেই বিপাকে পড়েছেন আমন চাষীরা। সম্প্রতি দু’দফা বন্যায় অধিকাংশ বীজ তলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমন চারা সংকটের আশংকা করছেন চাষীরা। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারাও সংকটের আশংকা করছেন। পুনরায় বীজ তলা তৈরী করে চাষ শুরু করা অনেক কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে বলে মনে করছেন চাষীরা। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দাবী চারা’র কোন সংকট হবে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় আমন চাষের জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৭৭ হাজার ৭শত ৩৩ হেক্টর। তৎমধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৯ হাজার ১শ হেক্টর, উখিয়া উপজেলায় ৯ হাজার ১০ হেক্টর, রামু উপজেলায় ৯ হাজার ৪০৫ হেক্টর, টেকনাফে ১০ হাজার ৮শ ৪০ হেক্টর, চকরিয়ায় ১৯ হাজার ২শ ২৮ হেক্টর, মহেশখালীতে ৮ হাজার ২শ হেক্টর, পেকুয়ায় ৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর, কুতুবদিয়ায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। তৎমধ্যে বীজ তলা হয়েছে ৪ হাজার ২শ হেক্টর।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া এলাকার কৃষক শফিউল আলম জানিয়েছেন, ৪০ শতক জমি বীজ তলা করেছিলাম। কয়েকদিনের মধ্যেই আমন রোপন করার কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বন্যায় বীজ তলার চারা পলিতে ঢেকে পড়েছে। এই চারা রোপন করার কোন সুযোগ নেই। আমাকে নতুনভাবে বীজ তলা তৈরী করে চারা উৎপাদনের পর আমার রোপন করতে হবে। এতে এক মাসেরও বেশী সময় লাগবে। এত পিছিয়ে গেলে আর চাষ করা যাবে না। সময় চলে যাবে। এখন অন্য কোন এলাকা থেকে চারা এনে রোপন করা না গেলে আমন চাষ বন্ধ রাখতে হবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের কৃষক আবু তাহের জানিয়েছেন ৮০ ভাগ বীজ তলায় পলি জমে চারা নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে কৃষকরা অনেকটা আতংকিত। অনেক কৃষক পাশ্ববর্তী উঁচু এলাকা থেকে চারা সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছেন, তবে এতে সফল হওয়ার তেমন সম্ভবনা নেই। সব স্থানেই চারা’র সংকট দেখা দিয়েছে।
চকরিয়ার পশ্চিম বড়ভেওলার গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, এখনো বীজ তলা থেকে পানি নেমে যায়নি। শুকাতে আরো কয়েকদিন লাগবে। ইতোমধ্যেই বীজ তলার অধিকাংশ চারায় পঁচন ধরেছে। অন্য কোন এলাকা থেকে চারা সংগ্রহ করা না গেলে চাষ হবে না। ওই জমিতে শাক-সবজির চাষ করতে হবে। এই ইউনিয়নের অধিকাংশ বীজ তলা পলি মাটিতে ঢেকে গেছে। ওই চারা ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই। প্রথম বারের বন্যার সময় বীজ তলা তেমন তৈরী হয়নি। গত কয়েকদিনের বৃষ্টির সময় চারা উত্তোলনের জন্য সব বীজ তলা তৈরী করা হয়েছিল। এই শেষ সময়ের বন্যায় তলিয়ে যায় বীজ তলা। প্রথম বারের বন্যায় আউশ চাষের ক্ষতি হলেও এবারের বন্যায় মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে আমনের বীজ তলায়।
রামু উপজেলার এক উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে আমন চারার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এটি পুষিয়ে উঠা দুরহ ব্যাপার। প্রতিটি এলাকায়ই বীজ তলা নষ্ট হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নতুন ভাবে চারা উৎপাদন করে চাষে নামা আরো দুরহ। এতে কৃষকদেরও কোন আগ্রহ নেই। যদি অন্য জেলা থেকে ব্যাপক ভাবে চারা আনা যায় তা হলে সংকট মোকাবেলা করা যাবে। তবে কৃষি বিভাগে বীজের কোন সংকট নেই।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আ.ক.ম শাহরিয়ার জানিয়েছেন, বীজ তলা ও চারা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জেলায় চারার সংকট দেখা দেবে না। কৃষি বিভাগে বীজের কোন অভাব নেই। সংকট মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে কৃষি বিভাগ।

পাঠকের মতামত: